সর্বশেষঃ
সাবেক ১২ মন্ত্রীসহ ১৪ জনকে আজ হাজির করা হচ্ছে ট্রাইব্যুনালে দীপু মনির সুপারিশে মাউশিতে তিন হাজার পদায়ন হাদিকে নিয়ে পোস্ট, চমক-মামুনকে হত্যার হুমকি অভিনেত্রীর প্রতি ভিড়ের মধ্যে হেনস্তার ঘটনা করোণা সংগীতজগতের প্রিয়তম ছেড়ে চলে গেলেন ক্রিস রিয়া সালমান খান ৬০ বছরে পা দিচ্ছেন ফরিদপুরের কনসার্টে বিশৃঙ্খলা, জেমসের মন্তব্য ২১ শতকের সেরা ক্রীড়াবিদ মেসি, শীর্ষ দশে আছেন যারা উজ্জয়িনীর ধর্মীয় নেতাদের হুমকির মধ্যে মোস্তাফিজের আইপিএলের ভবিষ্যৎ uncertain নৌ-দুর্ঘটনায় নিহত স্প্যানিশ কোচ ও তিন সন্তান বিপিএলের মাঝেই বাংলাদেশ ছাড়বেন কিছু পাকিস্তানি ক্রিকেটার প্রয়াত খালেদা জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিপিএলের ম্যাচ বাতিল
খালেদা জিয়ার ৪১ বছরের রাজনৈতিক জীবনের স্মরণীয় অধ্যায়

খালেদা জিয়ার ৪১ বছরের রাজনৈতিক জীবনের স্মরণীয় অধ্যায়

জাতীয়তাবাদী দলের প্রবীণ নেত্রী, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আজ আর নেই। তিনি মঙ্গলবার ভোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, যা দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক বড় শোকের ঘটনা।

খালেদা জিয়া তার গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে প্রবেশের মাধ্যমে ৪১ বছর ধরে দেশের মুখে হাসি সঞ্চার করেছেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে, কাউন্সিলের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে নির্বাচন হয় তার। এরপর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দলের নেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

তার ব্যক্তিত্ব, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সংগ্রামী জীবন তাকে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অক্ষরে স্থান করে দিয়েছে। তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পাশাপাশি তিনি দলের নির্বাচনে বিজয় লাভ করেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তাকে ‘আপসহীন নেত্রী’ উপাধি দেওয়া হয়। ইতিহাসে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাক্ষী হয়ে আছেন।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় তার স্বামী, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর। ১৯৮১ সালের ৩০ মে, জিয়া(‘–‘)র হত্যার পর বিএনপি সংকটে পড়ে। তখন তিনি স্বামীকে হারানোর দুঃখের অভিঘাতে স্বামীকে হারানোর বেদনা নিয়ে দলটিতে যোগ দেন। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে তার প্রবেশের মাধ্যমে শুরু হয় তার নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়।

তিনি ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১ এপ্রিলের বর্ধিত সভায় তার বক্তৃতা সংগৃহীত হয়। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হওয়ার পর তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব সামলান। ১৯৮৪ সালের মে মাসে তিনি প্রকাশ্যে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৯৮৩ সালে সাতদলীয় জোট গঠন করে স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম শুরু করে। তার নেতৃত্বে দলটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আপসহীন সংগ্রাম চালিয়ে যায়। এরশাদের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনকে বাতিল করার জন্য তাঁর আপসহীন লড়াই এক বিস্ময়কর ইতিহাস গড়ে। বিভিন্ন সময় তাকে আদালতের নানা নিষেধাজ্ঞা ও মামলা মোকাবেলা করতে হয়েছে।

জিয়া পরিবারের এই প্রবীণ নেত্রীর জীবনে নানা সংকট এসেছে। অগ্নিসংযোগে আক্রান্ত হয়েছেন, দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে এরশাদের দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন, নিজের বাড়ি হারানোর সর্বনাশের সময়েও তিনি দমে দেননি। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জেল জীবন উপভোগ করতে হয়েছে তাকে। পরে ২০০৮ সালে মুক্তির পর তার মা, বেগম তৈয়বা মজুমদার মৃত্যুবরণ করেন। তার জন্য তা আরও গভীর শোকের বিষয়।

করোনা মহামারীর সময় ২০২০ সালে পারিবারিক অনুরোধে তাকে ছয় মাসের জন্য শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর ২০২৫ সালে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি আবার মুক্তি পান। তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দেশের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

চিরঘুমে শায়িত হলেও তার রাজনীতিমুখী জীবন ও সংগ্রাম বাংলা রাজনীতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি কখনো নির্বাচনে পরাজিত হননি, বরং প্রতিবারই জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশের ইতিহাসে একজন সফল নারী নেত্রীর বৈচিত্র্য আয়ত্ত করেছেন। তার নেতৃত্বে নানা সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে।

আজ তার মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন শোকেরাগ্নিতে দগ্ধ। তার জীবন ও সংগ্রাম প্রমাণ করে, সত্যিকার নেতা কখনো অস্ত যায় না। তার অবদান চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY Shipon tech bd